এটিসি’র সাথে আমার “গেট ফর্কড” সিরিজের প্রথম দুই পর্ব এসেছে বেশ কয়েকমাস আগে। এন্ড্রয়েডের সবচেয়ে মজার বিষয় এই কাস্টম রম নিয়ে সবার প্রচুর আগ্রহ। প্রথম দুই পার্টে আপনাদের ব্যাপক সাড়া আবারো তা প্রমাণ করে দিলো। এই সিরিজটাতে কাস্টম রম এবং এর বিস্তারিত বিষয় আমি খুব সহজভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। প্রথম পর্বে ছিল মূলত কাস্টম রম এর পরিচিতি ও দ্বিতীয় পর্বে কাস্টম রম বিষয়ক বিভিন্ন টার্ম ব্যাখ্যা করেছি। আগের পর্বগুলো আপনি না পড়ে থাকলে এটা পড়ার আগে সেগুলো পড়ে নেয়ার অনুরোধ থাকলো উপরের লিংক থেকে। তাহলে আশা করি কোন বিষয় বুঝতে সমস্যা হবে না। আর তার পরেও সমস্যা হলে নিচে কমেন্ট বক্স তো আছেই।
আগের পর্বে আমরা আমাদের ফোনের বুটলোডার আনলক করে কাস্টম রিকভারি ও ইন্সটল করে ফেলেছি। অতএব, কাস্টম রিকভারি ইন্সটল করা আছে মানে আমাদের এখন আর সিস্টেম মডিফিকেশনের জন্য কম্পিউটার লাগবে না। কাস্টম রিকভারি ইন্সটল করা ফোনটি দিয়েই আমরা এখন যে কোন সময় যে কোন কাস্টম রম ইন্সটল বা ফ্ল্যাশ করতে পারবো। কাস্টম রিকভারি ইন্সটল করা থাকলে ব্রিক হয়ে ফোন ড্যামেজ হবার সম্ভাবনা ও কমে যায়।
রম ডাউনলোডঃ
ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা গুগল সার্চ এর মাধ্যমে আপনার ফোনের জন্য আপনার পছন্দের রম ফাইলটি খুঁজে পাবেন সেটিও আগের পর্বে বলা হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত রম ফাইলটি আপনি সরাসরি জিপ ফরম্যাটে ডাউনলোড করতে পারবেন। দুই একটি বাদে এন্ড্রয়েডের প্রায় সব কাস্টম রম ই ফ্রি তে ডাউনলোড করা যায়। আরেকটি ব্যাপার হলো জিপ ফাইলটি ডাউনলোড করার পর সেটি আর আনজিপ করা লাগবে না। আপনার কাস্টম রিকভারি সরাসরি জিপ ফাইলটিই ফ্ল্যাশ দিবে। তবে যারা নতুন তারা কখনোই এক মডেলের ফোনে আরেক ফোনের কাস্টম রম ফ্ল্যাশ করার চেস্টা করবেন না।
গুগল অ্যাপস প্যাকেজ ডাউনলোডঃ
বেশিরভাগ কাস্টম রমেই বেসিক প্রয়োজনীয় দুই একটি অ্যাপ বাদে অন্য কোন অ্যাপ ইন্সটল করা থাকে না। বিশেষ করে এওএসপি বেইজড রমগুলোতে গুগল এর কোন অ্যাপ বা সার্ভিস যেমন প্লে স্টোর থাকে না। তাই আপনাকে সেটা ম্যানুয়ালি ইন্সটল করা লাগবে। ম্যানুয়ালি ইন্সটল করা লাগবে মানে এমন না যে সেটা নরম্যাল অ্যাপ এর মতো ইন্সটল হবে। বরং গুগল এর অ্যাপ প্যাকেজ আপনি সিস্টেমলেস ভাবে ইন্সটল করতে পারবেন।
তার মানে অন্যান্য ফোনের গুগল সার্ভিসের মতোই আপনার ফোনের গুগল এর অ্যাপগুলোর আপনার সিস্টেমের কোরে প্রবেশ করা ক্ষমতা থাকবে। মনেই হবে না অ্যাপগুলো পরে ইন্সটল করা। গুগল এর অ্যাপ ও সার্ভিসগুলো ডাউনলোড করার জন্য একটি ডেডিকেটেড সাইট ও আছে। যদিও সাইটটি গুগলের না।
বিভিন্ন ডেভেলপাররা মিলে opengapps.org নামের একটি সাইট মেইন্টেইন করেন। এখানে আপনি গুগলের সব অ্যাপ ও সার্ভিসের প্যাকেজ জিপ ফরম্যাটে ফ্রি তে ডাউনলোড করতে পারবেন। গুগল সার্ভিস রিলেটেড অনেক অ্যাপ আছে। যেমনঃ প্লে মিউজিক, প্লে গেমস, প্লে মুভিজ, প্লে বুকস এবং আরো অনেক কিছু। আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সবার এসব অ্যাপ লাগে না। অনেকের আবার শুধু গুগল প্লে স্টোর হলেই ব্যাস। তাই ওপেনজি অ্যাপস এর সাইটে আপনি আপনার চাহিদামতো বিভিন্ন প্যাকেজ থেকে বাছাই করে ডাউনলোড করতে পারবেন।
এসব প্যাকেজের আবার বিভিন্ন নাম দিয়েছে তারা। যেমনঃ “ফুল” নামক প্যাকেজে আপনি প্লে স্টোর সহ গুগলের সব অ্যাপ ই পাবেন। অনেকটা গুগল পিক্সেল ফোনগুলোর মতো। আবার “পিকো” নামক প্যাকেজে শুধুই গুগল প্লে স্টোর ও বেসিক কিছু ফ্রেমওয়ার্ক থাকে। আপনার ফোনের র্যাম ও স্টোরেজ স্বল্পতা থাকলে আপনার জন্য ছোট প্যাকেজ ডাউনলোড করাই যুক্তিযুক্ত হবে। পরে প্রয়োজনীয় গুগল এর অ্যাপ তো আলাদাভাবে ইন্সটল করতে পারবেনই।
আর আপনি যদি চান যে আপনি গুগল প্লে স্টোর সহ গুগলের কোন সার্ভিস ইন্সটল করবেন না তাহলে ডাউনলোড না করলেও পারেন। তখন আপনি গুগলের কোন সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন না এবং অ্যাপ ইন্সটল করতে হলেও আপনাকে আলাদাভাবে এপিকে ফাইল ডাউনলোড করে সাইডলোড করা লাগবে কিংবা অন্য কোন থার্ড পার্টি অ্যাপ স্টোর ব্যবহার করা লাগবে।
কারেন্ট রম ব্যাকআপঃ
এই ধাপটি আবশ্যিক না হলেও আপনার সেফটির জন্য অবশ্যই করা উচিত। প্রতিবার আপনি নতুন কোন রম ইন্সটল করার আগে বর্তমানে ব্যবহার করা রমের একটি ফুল ব্যাকআপ নিয়ে রাখা ভালো। এক্সপার্টরা এটাই সাজেস্ট করেন। কারণ অনেকসময় কাস্টম রম ইন্সটল করতে গেলে ইন্সটল নেয় না বা কোন সমস্যা দেখা দেয়।
তখন আপনার যদি সর্বশেষ ব্যবহার করা রমটির ফুল ব্যাকআপ ফাইল থাকে তাহলে আর কোন চিন্তা নেই। পাঁচ মিনিটের মাঝেই আবার আগের রমের আগের স্টেটে ফিরে যেতে পারবেন। আর প্রথমবারের মতো যদি অফিশিয়াল রম থেকে কাস্টম রমে যান তাহলে আমি সাজেস্ট করবো অফিশিয়াল রমটির একট ফুল ব্যাকআপ নিয়ে নিতে।
কারণ আপনার যদি কাস্টম রম একটু ব্যবহার করার পর ভালো না লাগে তাহলে যেন খুব সহজেই ব্যাক করতে পারেন। শাওমি বা এই ধরনের ফোনগুলোর ক্ষেত্রে অফিশিয়াল রম এর ব্যাকআপ না রাখলেও আপনাকে খুব বেশি কিছু হারাতে হবে না। কারণ এদের সব রম ই তাদের অফিশিয়াল সাইটে দেয়া আছে। কিন্তু অনেক ফোন কোম্পানি তাদের অফিশিয়াল রম ওয়েবসাইটে দিয়ে রাখে না। সেক্ষেত্রে ব্যাকআপ রাখাই উচিত।
এখন কথা হচ্ছে ব্যাকআপ কিভাবে করবেন। এন্ড্রয়েড ফোনে রম এবং ডেটার ফুল ব্যাকআপ কে বলা হয় ন্যান্ড্রয়েড ব্যাকআপ। রুট করা ফোনে ন্যান্ড্রয়েড ব্যাকআপ অনেকভাবেই রাখা যায়। তবে ফোন রুটেড হোক বা আনরুটেড, ন্যান্ড্রয়েড ব্যাকআপ এর জন্য আপনার কাস্টম রিকভারিটিই যথেষ্ট। সব কাস্টম রিকভারিতেই ব্যাকআপ ও রিস্টোর এর অপশন থাকে।
আপনার ফোনের ব্যাকআপ নেয়ার জন্য যেভাবে বলেছিলাম, মানে ফোন বন্ধ থাকা অবস্থায় পাওয়ার ও ভলিউম ডাউন বাটন একটানা ১০ সেকেন্ড ছেপে ধরে রেখে রিকভারি মেন্যুতে চলে যান। তারপর ব্যাকআপ অপশনে গিয়ে দেখবেন আপনার স্টোরেজের একেকটা পার্টিশন দেখাবে। আপনি যে যে পার্টিশন এর ব্যাকআপ রাখতে চান সেগুলো টিক মার্ক করে ব্যাকআপ দিলেই ডেটার সাইজ অনুযায়ী ৪-৫ মিনিটের মাঝেই ব্যাকআপ এর জিপ ফাইল তৈরি হয়ে যাবে।
আপনি ব্যাকআপ ফাইলের লোকেশন ও সিলেক্ট করে দিতে পারবেন। ঐ জিপ ফাইলটি পোর্টেবল, মানে আপনি আপনার পিসি, ক্লাউড বা যেকোন জায়গায় সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। ব্যাকআপ অপশনে গেলে আপনি চাইলে শুধু রম কিংবা সব ডেটা ও ক্যাশ সহ ব্যাকআপ করতে পারবেন। ডেটা ও ক্যাশ সহ ব্যাকআপ করার পর আপনি আবার ঐ ব্যাকআপ ফাইলটি রিস্টোর করলে প্রত্যেকটি ডেটা সহ ফোন সম্পূর্ন আগের অবস্থায় ফিরে পাবেন।
রম ইন্সটল এর সময় কোন গণ্ডগোল হলে কিংবা ইচ্ছা করেই আগের ব্যাকআপে ফিরে যাওয়ার প্রসেস ও সিম্পল। আগের মতোই কাস্টম রিকভারি মেন্যুতে গিয়ে রিস্টোর অপশনে যান। তারপর আপনার স্টোরেজ ব্রাউজ করে ব্যাকআপ ফাইলটি সিলেক্ট করে দিন। ব্যাস, ৪-৫ মিনিটেই ফোন আগের অবস্থায় ফিরে গিয়ে রিবুট হবে।
স্টোরেজ ফরম্যাটঃ
কাস্টম রম এর কিছু লিমিটেশন আছে। বেশিরভাগ কাস্টম রম ইন্সটল করতে গেলেই ক্লিন ইন্সটল করতে হইয়। মানে আপনার গান, ভিডিও ও ছবি অর্থাৎ ইন্টারনাল বা এক্সটারনাল স্টোরেজ বাদে ফোনের অন্যান্য ডেটা ও অ্যাপ মুছে তারপর ইন্সটল করা লাগবে। যদিও অনেক রম ডেটা রেখেই ফ্ল্যাশ বা আপডেট দেয়া যায়। কিন্তু সেটা না করাই ভালো। এতে ফোন এর রম মিসবিহেভ করতে পারে এমনকি ফোন সফট ব্রিক ও হতে পারে।
ফোনের ডেটা ফরম্যাট এর জন্য আপনাকে আবারো কাস্টম রিকভারি মেন্যুতে যেতে হবে। রিকভারি মেন্যু থেকে “ওয়াইপ” অপশনে গিয়ে ফরম্যাট ডেটা অথবা এডভান্সড ওয়াইপ সিলেক্ট করে ফরম্যাট দিতে পারবেন। এডভান্সড ওয়াইপ অপশন সিলেক্ট করলে আপনি আলাদা আলাদা ভাবে কোন কোন পার্টিশন মুছবেন তা সিলেক্ট করতে পারবেন। কাস্টম রম ক্লিন ফ্ল্যাশ দেয়ার জন্য ড্যালভিক ক্যাশ, সিস্টেম, ক্যাশ আর ডেটা পার্টিশন মুছলেই যথেষ্ট। ইন্টারনাল স্টোরেজের বিভিন্ন ফাইল থাকলেও সমস্যা নেই। তবে আপনি চাইলে ফরম্যাট ডেটা অপশন এর মাধ্যমে সব একবারেই মুছে ফেলতে পারবেন।
রম ফ্ল্যাশঃ
এখন আপনার ফোনের সিস্টেম পুরো মুছে গেছে। তার মানে আপনার ফোনে কোন ডেটা বা অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা নেই। এই অবস্থায় ফোন পুরো ব্ল্যাংক বলতে পারেন। ইন্টারনাল স্টোরেজে কিছু থাকলেও অপারেটিং সিস্টেম এর অভাবে ফোন ব্যবহারযোগ্য না। তবে এই অবস্থায় ও কাস্টম রিকভারি মেন্যু থেকে চাইলে ইন্টারনাল স্টোরেজের ফাইল ব্রাউজ কিংবা পিসি তে ট্রান্সফার করতে পারবেন ইউএসবি দিয়ে। একই সাথে আপনার ফোন এখন কাস্টম রম ফ্ল্যাশ নেয়ার জন্য প্রস্তুত।
ফোনের চার্জ যদি ৮০ ভাগের কম থাকে তাহলে আপনার ফোনটি চার্জার এ কানেক্ট করে নিন। এখন রিকভারি মেন্যু তে গিয়ে “ইন্সটল” অপশনে যান। এখন আপনি আপনার ফোনের স্টোরেজ কিংবা এসডি কার্ডে রাখা রম এর জিপ ফাইলটি সিলেক্ট করে ইন্সটল চাপলেই সেটা ইন্সটল হতে থাকবে। ফোনের স্পিড অনুযায়ী কয়েক মিনিট লাগতে পারে ইন্সটল হতে। ইন্সটল এর সময় কত পারসেন্ট হলো সেটা প্রোগ্রেস বারে শো করবে।ইন্সটল হয়ে যাওয়ার পর আপনার ফোন রিস্টার্ট করতে বলবে।
এ অবস্থায় আপনি যদি আপনার ডাউনলোড করা গুগল এর এপ ও সার্ভিসের প্যাকেজ ইন্সটল করতে চান তাহলে রিস্টার্ট না দিয়ে আবার রিকভারি মেন্যুর ইন্সটল অপশনে চলে যান। এবার গুগল অ্যাপস এর জিপ ফাইলটিও রম এর মতো একইভাবে ইন্সটল করুন। তবে আপনি না চাইলে নাও ইন্সটল করতে পারেন। শুধু রম ইন্সটল করে সেট রিস্টার্ট করলেও ফোন চলবে। শুধু গুগল এর সার্ভিস পাবেন না। এমনকি কিছুদিন গুগল এর সার্ভিস ছাড়া ফোন ব্যবহার করে পরে চাইলে একইভাবে অন্য কোন সময় গুগল অ্যাপস এই প্রসেসে ইন্সটল করতে পারবেন।
রম ও গুগল অ্যাপস ইন্সটল করা হয়ে গেলে এবার ফোন রিস্টার্ট দিলে এখবেন নতুন রম এর বুট লোগো শো করছে। তার মানে আপনার ফোনে নতুন কাস্টম রম ইন্সটল হয়েছে। তবে এই প্রথমবারের মতোই ফোন রিস্টার্ট নিতে একটু সময় নিবে। ১০ মিনিটের বেশি সময় ধরেও রিস্টার্ট এর প্রসেস চলতে পারে। ভয়ের কিছু নেই। অপেক্ষা করুন। আর চার্জার ডিসকানেক্ট বা কোন বাটন প্রেস করবেন না। একসময় দেখবেন আপনার ফোনটি বুট হয়েছে এবং নতুন ফোন সেটআপ এর অপশন এসেছে।
ব্যাস, আপনি এখন এন্ড্রয়েডের কাস্টম রম ইউজার। ফোন সেটআপ করার পর প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো ইন্সটল করে উপভোগ করতে থাকুন কাস্টম রম এর মজার জগত।
আর এর মাধ্যমেই আমাদের কাস্টম রম ইন্সটলের টিউটোরিয়াল নিয়ে “গেট ফর্কড” সিরিজের সমাপ্তি ঘটলো। আপনাদের কোন প্রশ্ন বা সামনে কি বিষয় নিয়ে লেখা চান তা জানাতে কমেন্ট করুন। এই সিরিজের পর আশা করি কারো কাস্টম রম নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকার কথা না এবং অনেকেই হয়তো কাস্টম রম ইন্সটল করা শিখে ফেলবেন। কাস্টম রম ইন্সটল ও রুট করার পরেই পাওয়া যায় এন্ড্রয়েডের আসল মজা। তাই সামনে হয়তো রুট ও সিস্টেম লেভেল এর কাস্টমাইজেশন নিয়ে আরো অনেক নতুন আর্টিকেল আসবে।
হ্যাপি ফর্কিং! এন্ড কনগ্র্যাটস, নাউ ইউ আর এন এন্ড্রয়েড পাওয়ারইউজার!
The post যেভাবে এন্ড্রয়েড ফোনে ফ্ল্যাশ করবেন কাস্টম রম – Get Forked (পার্ট -৩) appeared first on ATC ToTo.
from ATC ToTo
via ifttt
No comments:
Post a Comment