বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলের আগেও এতটা চিন্তিত হইনি যতটা হচ্ছি এই মোবাইল ফোন নিবন্ধন পদ্ধতি নিয়ে। আমাদের প্রায় ৩ লক্ষ মেম্বারের অধীর আগ্রহের অবসান ঘটতে যাচ্ছে এই লেখার মাধ্যমে। আজ আমরা আলোচনা করবো এই অভিনব নিবন্ধন পদ্ধতির খুঁটিনাটি সব বিষয়গুলো নিয়ে।
মোবাইল ফোন নিবন্ধন পদ্ধতি কি?
প্রতি বছর প্রায় ৩০% হ্যান্ডসেট সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়ছে দেশের বাজারে। যার দরুণ ৮শ থেকে এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তাই তারা নিতে চাচ্ছে অভিনব এক উদ্যোগ! নিজস্ব ডাটাবেজে শুধুমাত্র বৈধ ফোনের IMEI (International Mobile Equipment Identity ) সংরক্ষণের মাধ্যমে রুখে দিবে চোরাই পথে আনা হ্যান্ডসেট।
কিভাবে কাজ করবে এই পদ্ধতি?
বিবিসি বাংলাতে প্রকাশ হওয়া একটি লেখায় এই সম্পর্কে আছে বিস্তর আলোচনা। বিটিআরসির সূত্রমতে তিনটি ধাপে সম্পন্ন হবে এই পদ্ধতি। সংক্ষেপে যদি বলা হয়, তা অনেকটা নিম্নরূপ-
প্রথমতঃ বৈধ হ্যান্ডসেট এর আইএমইআই সংরক্ষণের মাধ্যমে বৈধ ফোনের ডাটাবেজ তৈরি হবে!
দ্বিতীয়তঃ বিটিআরসি তাদের ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (ইআইআর) তৈরি করবে এবং প্রতিটা সিম নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা হ্যান্ডসেট এর তালিকা বানাবে টেলিকম কোম্পানিগুলো।
তৃতীয়ত যেটা ঘটতে পারে, সিম যে নামে নিবন্ধিত, হ্যান্ডসেটও নাকি সেই নামে নিবন্ধন হয়ে যাবে! অন্য সিম চলবেনা সেই হ্যান্ডসেটে! তবে এখনো কিছু ফাইনাল না। পুরো প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত হওয়ার পর বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়গুলো জানানো হবে বলে জানান বিটিআরসির নতুন মহাপরিচালক নাসিম পারভেজ।
আমাদের কিছুকথাঃ-
বৈধ উপায়ে হ্যান্ডসেট আসলে সরকারের রাজস্ব আয় হবে- এটা খুবই আনন্দের সংবাদ, কিন্তু অদ্ভুত এই উপায়ে হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের নামে হয়রানিগুলো মোটেও আনন্দের সংবাদ না।
কাস্টমসে নিয়মনীতির বদলে ঘুষের প্রচলন কিংবা উচ্চহারে রাজস্ব আদায়ের নীতি না পরিবর্তন করে, নতুন এই নিবন্ধন হয়রানি কতটুকু যৌক্তিক তা সময়ই বলে দেবে।
- এখন আমরা দেখবো সরকারের এই নিয়মের বেহাল দশা-
বিটিআরসি জানিয়েছে মুঠোফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে বড় অক্ষরে কেওয়াইডি লিখে স্পেস দিয়ে ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বরটি লিখে ১৬০০২ নম্বরে খুদে বার্তা পাঠালে ফিরতি খুদে বার্তায় গ্রাহক বিটিআরসির তথ্যভান্ডারে ওই আইএমইআই নম্বরটি আছে কি না, তা জানতে পারবেন।
প্রথম দিকে সবারই দেখা যাচ্ছিলো “ডিভাইসটির IMEI ডাটাবেজে পাওয়া যায়নি” অফিসিয়াল ফোন হওয়া সত্ত্বেও অনেকে এই ফিরতি মেসেজ দেখে শংকিত হয়।
পরে জানা গেল KYD লিখে স্পেস দিয়ে IMEI এর প্রথম ২ ডিজিট,এরপর একটা স্পেস দিয়ে পরের ৫ ডিজিট,এরপর আবার স্পেস দিয়ে পরের ২ ডিজিট এবং লাস্ট স্পেস দিয়ে বাকি ৬ ডিজিট (KYD 42 04204 20 420420) বসিয়ে ১৬০০২ নাম্বারে সেন্ড করলেই বিটিআরসি জানাচ্ছে, “এই ডিভাইসের আইএমইআই তাদের ডাটাবেজে পাওয়া গিয়েছে।”
*কতটা কান্ডজ্ঞানহীন হলে নিয়মকানুন সঠিকভাবে না জানিয়ে একটা সিস্টেম চালু করে দেয় বিটিআরসির মত গুরুত্বপূর্ণ কমিশন! এরপর মজার কাহিনী হচ্ছে, ঐ নিয়ম অনুযায়ী মেসেজ পাঠালে সব আন-অফিসিয়াল ডিভাইসেরও আইএমইআই পাওয়া যাচ্ছে বিটিআরসির ডাটাবেজে! এমনকি ১৫ ডিজিটের যেকোন সংখ্যা অথবা উল্টোপাল্টা কিছু লিখলেই বলছে আইএমইআই নাকি পাওয়া গিয়েছে! এ কেমন ডাটাবেজ রে বাবা!
আমাদের প্রতিক্রিয়া এবং মতামতঃ
সবকিছু সঠিকভাবে শুরু না করেই পত্রিকাওয়ালারা চটকদার শিরোনামে খবর প্রকাশ করছে, “অবৈধ ফোনের দিন শেষ”, “সিম চলবেনা আর”। এগুলো কি মগের মুল্লুক? এত এত টাকা খরচ করে সেট কিনেছে পাবলিক, হুট করে অফ হয়ে যাবে? কখনোই না।
খসড়ায় স্পষ্টভাবে বলা আছে,
উক্ত ডাটাবেজকে ব্ল্যাক, হোয়াইট ও গ্রে- এই তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে। নির্দেশনায় ‘হোয়াইট’ বলতে বোঝানো হয়েছে বৈধভাবে আমদানি করা এবং দেশে বৈধভাবে তৈরি হ্যান্ডসেটগুলোকে। অর্থাৎ যে সেটগুলো বিটিআরসি নিবন্ধিত।
‘গ্রে’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ক্লোন, অনুমোদনহীন নকল, অবৈধভাবে আমদানি হয়ে আসা সেটগুলোকে। এই সেটগুলো অবৈধ হলেও এবারের মতো সেগুলোকে অনুমোদন দেয়া হবে। আর ব্ল্যাক ক্যাটাগরিতে থাকবে চুরি যাওয়া হ্যান্ডসেট এর IMEI.
সুতরাং আপনাদের চিন্তার কিছু নেই। নিশ্চিন্তে কিনে ফেলুন কাঙ্খিত ডিভাইসটি। নতুন নিয়ম আসলে অবশ্যই নিবন্ধনের সুযোগ তৈরি হবে। একাধিক সিম ব্যবহার করতে না দিলে সিম কোম্পানীওয়ালাদেরও লস আছে কিছুটা। আর সরকার কখনোই জনগণের স্বার্থের জন্য নিয়ম বানায় না। সুতরাং রাঘব-বোয়ালদের লাভের হিসাব করেই নিয়মনীতি তৈরি হবে, এরমধ্যে আমজনতা যতটুকু লাভবান হয় আর কি!
The post বিড়ম্বনার অপর নাম “মোবাইল ফোন নিবন্ধন পদ্ধতি” appeared first on ATC ToTo.
from ATC ToTo
via ifttt
No comments:
Post a Comment