গত অক্টোবরে দেশের বাজারে আসে টেক জায়ান্ট আসুসের vivobook s15 S530 মডেলের ল্যাপটপ। বাজারে আসার সাথে সাথেই ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। সেই সাড়া দেখে আমরাও ব্যাপক কৌতুহলী হয়ে একে খুঁজতে থাকি। অবশেষে আসুস বাংলাদেশের সহায়তায় ল্যাপটপটির এক্সপেরিয়েন্স নেবার পর আপনাদের জন্য লিখতে বসলাম vivobook s15 S530uf মডেলটির বিস্তারিত নিয়ে।
আউটলুকঃ বর্তমানে দেশের বাজারে এভেইলেবল এই বাজেটের মধ্যের যে কোন ল্যাপটপকে টেক্কা দেবার ক্ষমতা রাখে আসুসের এই ডিভাইস খানা। ব্রাশ ফিনিশিং এর সাথে “সিলভার ব্লু, আইসাইকেল গোল্ড, স্যাটার গ্রে, গান মেটাল,ফারমানেন্ট গ্রিন” পাওয়া যাচ্ছে এই পাঁচ রঙে। গতানুগতিক ডিজাইন থেকে বের হয়ে একদম নতুন এক ডিজাইন এর ল্যাপটপ বাজারে আনায় একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য আসুসের।
ল্যাপটপটির দৈর্ঘ্য ৩৬১ মিলিমিটার মানে ১৪.২১ ইঞ্চি, প্রস্থে ২৪৩ মিলিমিটার বা ৯.৫৭ ইঞ্চি আর উচ্চতায় ১৮ মিলিমিটার মানে ০.৭১ ইঞ্চি। স্লিম, হালকা, স্টাইলিশ এবং প্রিমিয়াম লুক তার সাথে ইউনিক ডিজাইন এবং কালার যে কারোরই ভালো লাগবে বলে আমি মনে করি।
স্পেসিফিকেশনঃ
প্রসেসরঃ ল্যাপটপটিতে প্রসেসর হিসেবে আছে ইন্টেল এর ৮ম জেনারেশন এর core i5-8250u . যা আপনার ডে টু ডে মিডিয়াম টু লাইট হেভি কাজ অনায়াসেই করে ফেলতে পারবে। ইন্টেলের মতে তাদের এই প্রসেসর তার পূর্বের core i5-7200u থেকে প্রায় ৪০% পারফমেন্স বুস্ট দিবে। TDP কম হওয়ার ফলে এতে আপনি পাচ্ছেন বেতার ব্যাটারী ব্যাকআপ। প্রসেসরটির ক্লক স্পীড ১.৬০ গিগাহার্জ থেকে ৩.৯০ গিগাহার্জ।
র্যামঃ ডিভাইসটিতে দেয়া আছে ৮ গিগাবাইটের DDR4 ২৪০০ মেগা হার্জের র্যাম। তবে সবথেকে ভালো ব্যাপার হলো আরেকটি ব্ল্যাংক স্লট দেয়া আছে যার মাধ্যমে আপনি সর্বোচ্চ ১৬ গিগাবাইট পর্যন্ত র্যাম আপগ্রেড করতে পারবেন।
স্টোরেজঃ ল্যাপটপটিতে স্টোরেজ হিসেবে দেয়া আছে ১ টেরাবাইট এর হার্ডড্রাইভ এবং তার সাথে এসএসডির জন্য দেয়া আছে একটি ‘Sata m.2’ স্লট। যার মাধ্যমে এসএসডি লাগিয়ে ল্যাপটপকে করে ফেলতে পারেন সুপার ফাস্ট। তবে এই ল্যাপটপের কিছু ভ্যারিয়েন্টে দেয়া আছে SSDH ও এসএসডি।
জিপিউঃ ইন্টেলের UHD Graphics 620 ইন্ট্রিগ্রেটেড জিপিউ এর পাশাপাশি আসুসের এই ল্যাপটপে ব্যাবহার করা হয়েছে এনভিডিয়ার mx130/mx 150 ডেডিকেটেড জিপিউ। এই জিপিউ মিডিয়াম টু লাইট হেভি কাজ সহজেই চলবে। করতে পারবেন হালকা গেমিংও। তবে তুলনামূলক একটু ডাউনগ্রেডেড জিপিউ (mx 130) হওয়ায় একদম ডেডিকেটেড গেমারদের এই মডেলটি এড়িয়ে থাকার অনুরোধ করা গেলো। তবে চাইলে mx 150 দেয়া ল্যাপটপটি দেখতে পারেন মিডিয়াম গেমিং এর জন্য।
পোর্ট এবং কানেক্টিভিটিঃ পোর্ট সংখ্যা হিসেব করলে অ্যাপলকে লজ্জায় ফেলতে পারবে আসুস। বাম পাশে আছে দুইটি ইউএসবি টাইপ-এ (Type-A),মাইক্রো এসডি স্লট ,পাওয়ার ও চারজিং ইন্ডিকেটর। আর ডান পাশে আছে ডিসি পাওয়ার জ্যাক, একটি ইউএসবি ৩.১ টাইপ-বি (Gen 1), একটি টাইপ-সি (3.1 Gen 1) পোর্ট আর ডিস্প্লে আউটপুটের জন্য দেয়া আছে একটি HDMI ক্যাবল। দেয়া আছে ব্লূটুথ ৪.২ ও ওয়াইফাই 802.11ac। তবে থাকছেনা কোন ইথারনেট পোর্ট।
অডিওঃ অডিও এর জন্য রয়েছে দুটি স্পিকার যা দেয়া আছে ডান ও বাম কর্নারে। কোলে রেখে সাউন্ড শুনতে পারবেন ভালোই। স্পিকার সাইডে হওয়ার কোলে বা কোন সার্ফেসে সাউন্ড ব্লকিং এর সুযোগ খুবই কম। তবে লাউড স্পিকার ছোট রুমের জন্য পারফেক্ট হলেও মিডিয়াম বা বড় রুমের জন্য অতটা কার্যকরী নয়। হেডফোন/ মাইক্রোফোনের জন্য দেয়া আছে ৩.৫ মিলিমিটারের হেডফোন মাইক্রোফন কম্বো জ্যাক।
ডিসপ্লেঃ ডিসপ্লে হিসেবে ল্যাপটপটিতে দেয়া আছে ১৫.৬ ইঞ্চির এফএইচডি প্যানেল। যার রেজুলেশন ১৯৮০*১০৮০ পিক্সেল। ন্যারো বেজেল হওয়ায় এর স্ক্রিন টু বডি রেশিও ৮৪%। দেখে ভালো লাগছে ম্যানুফ্যাকচারারগন তাদের চিরচেনা মোটা বেজেল থেকে সরে আসছে। ডিসপ্লেটির ভিউইং এংগেল ১৭৮ ডিগ্রি। ল্যাপটপে দেয়া আছে আসুসের নিজস্ব ASUS Splendid visual-optimization technology যার ফলে ডিসপ্লেটিতে কন্টেন্ট ভিউইং যথেস্ট ভালো মনে হয়েছে। তাদের EYE CARE মুডে প্রায় ৩০% নীল আলো কমিয়ে দিতে পারে যা আপনার চোখের জন্য ভালো। তবে ডিসপ্লেটি কালার একুরেসির বেলায় খানিকটা দুর্বল মনে হয়েছে আমার কাছে।
ব্যাটারীঃ পোর্টেবল কম্পিউটারের সবচেয়ে মূল্যবান ফিচার। গান শোনা ,মুভি দেখা,কিংবা ব্রাউজিং এইসব কাজে প্রায় ৬ ঘন্টার মত ব্যাকাপ পাবেন টানা। আর গেমিং এ পাবেন ১ ঘন্টার কিছু বেশি ব্যাকআপ। ব্যাটারী হিসেবে আছে 42Wh এর ব্যাটারী। যদিও ব্যাটারীটা আমার কাছে কম মনে হয়েছে তবে ভালো বিষয় হলো বক্সে দেয়া ফাস্ট চার্জার। যার মাধ্যমে ৪৯ মিনিটে হবে ৬০% চার্জ। ফুল চার্জ হতে সময় লাগবে দেড় ঘন্টার কাছাকাছি।
বক্সে দেয়া চার্জারটি ৬৫ ওয়াটের ফাস্ট চার্জার।
হিটিংঃ এবার আসি এই ডিভাইসটির হিটিং নিয়ে। নিচের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন এর হিটিং এরিয়া। গেমিং বা রেন্ডারিং এর সময় ২.৯৯ গিগাহার্জে এর তাপমাত্রা ঠেকেছে প্রায় ৭৮+ ডিগ্রিতে তবে আসুসের বেটার কুলিং সলিউশনের জন্য টেম্পারেচার প্রায় ১০ ডিগ্রির ডিফারেন্স দেখা গিয়েছে মাত্র ১০ মিনিটেই।
গেমিংঃ এই ব্যাপারে আমি একটাই কথা বলবো এই বান্দা গেমিং এর জন্য নয়। বরং কর্পোরেট বা ইউনিভার্সিটি বেজড কাস্টমার টার্গেট করে তারা গেমিং থেকে সরে লুকের দিকে বেশি নজর দিয়েছে। তবে খেলতে পারবেন সব AAA টাইটেলের গেমস গুলো লো সেটিংস এ। আবারো বলছি ডেডিকেটেড গেমারদের জন্য ল্যাপটপটি নয়।
ফিচারসঃ
আরগোলিফট হিঞ্জঃ ল্যাপটপটিতে আসুস পরিচয় করে দিয়েছে “আরগোলিফট হিঞ্জ” এর। এর ফলে ল্যাপটপ ওপেন করার সময় কীবোর্ড প্রায় ৩.৫ ডিগ্রি উপরে উঠে আসবে। এতে করে একদিকে যেমন সাহায্য হবে টাইপিংএ অপরদিকে আপনাকে দিবে কুলিং বেনেফিট।
ফিঙ্গারপ্রিন্টঃ ল্যাপটপটিতে সিকিউরিটির জন্য দেয়া আছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার।যার স্পিড আমার কাছে ব্লেজিং ফাস্ট মনে না হলেও ভালোর ক্যাটাগরিতে পড়বে।
ব্যাকলিট কীবোর্ডঃ এই ফিচারটা আমার মতে সব ল্যাপটপে থাকা বাধ্যতামুলক করা উচিত। কেননা কম আলো বা অন্ধকারে কাজ করার সময় এই ফিচার ভালোই কাজ দেয়।
উপসংহারঃ এবার আসি আমার কেমন লাগলো এই বিষয়ে। সত্যি বলতে ডে টু ডে লাইফে কাজের জন্য বলতে গেলে পারফেক্ট ল্যাপটপ। ওজনে হালকা তাই সহজেই বহন করা যায়। দেখতে জোশ। বন্ধু বা কলিগদের সামনে বের করলে তারা আপনাকে এর বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেই এই নিশ্চয়তা দিলাম। এবার আসি আমার কি কি দিক গুলো ভালো লেগেছে আর কোন কোন দিক গুলো ভালো লাগেনি বা ইমপ্রুভমেন্ট প্রয়োজন।
যেসব দিক ভালো লেগেছে-
- সুন্দর ডিজাইন আর প্রিমিয়াম লুক
- পাতলা এবং ওজনে হালকা
- m.2 স্লট
- থিন বেজেল
- ম্যানুয়ালি ডিসপ্লে কালার এডজাস্টিং সুবিধা
- ভিউইং এংগেল যথেস্ট বেটার · ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ফর সিকিউরিটি
- ব্যাকলিট কীবোর্ড
- ফাস্ট চার্জিং
- আরগোলিফট হিঞ্জ
- ট্রাকপ্যাড এবং কীবোর্ড
- কুলিং সলিউশন
যে দিকগুলো ভালো লাগে নি-
- ইথারনেট পোর্ট না থাকা
- MX 130 জিপিউ
- ডিসপ্লেতে শার্পনেস এর ঘাটতি
- মাত্র ৫৪% sRGB সাপোর্ট
- ১৬ জিবি পর্যন্ত র্যাম আপগ্রেড লিমিটেশন
- দুই দুইটি ইউএসবি ২.০ পোর্ট
যে জিনিসগুলো হলে ভালো হতো –
- সবার আগে মিড বাজেট রেঞ্জে এম এক্স ১৩০ জিপিউ এর বদলে এমএক্স ১৫০ হলে ভালো হতো।
- ইউ এসবি ৩.০ /৩.১ পোর্ট বাড়ানো।
- আরেকটু বেটার ডিসপ্লে।
- ৩২ জিবি পর্যন্ত র্যাম বাড়ানোর অপশন
- বেস মডেলে একটা ১২৮ জিবি এসএসডি রেগুলার হার্ডড্রাইভের সাথে। যদিও এটা বেশি চাওয়া হয়ে যায় কিন্তু এটাই হবে এই ল্যাপটপের জন্য গেম চেঞ্জার ফিচার।
এবার আসি সবথেকে বড় কথায় কিনবেন নাকি কিনবেন না? যদি আমাকে জিজ্ঞেসা করেন তাহলে আমি বলবো হেভি টু মিডিয়াম গেমিং না করলে চোখ বুজে নিয়ে নিন। এটা গেমারদের থেকে দূরে থাকার অনুরোধ থাকবে। এছাড়া সকল রেঞ্জের ব্যবহারকারীদের জন্য উপযুক্ত একটি অপশন হবে এটি।
আর টাকা আপনার তাই কিনার আগে দেখে দেখে শুনে বুঝে কিনবেন। ল্যাপটপটি দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ৫০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে। আমাদের ইউনিটটির বাজার দ্র ছিলো ৬০ হাজার টাকার আশেপাশে।
অনেক মতামত, অভিযোগ দিলাম। আজকে আর না। ফিরে আসবো আবার ততদিন ভালো থাকুন। বেশি বেশি করে শেয়ার করুন আর জানাতে ভুলবেন না কেমন লেগেছে।
The post ASUS vivobook S15 S530: বিউটি উইথ ব্রেইন? appeared first on ATC ToTo.
from ATC ToTo
via ifttt
No comments:
Post a Comment